বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় হত্যা ও অন্যান্য ঘটনায় দায়েরকৃত ৩২টি মামলার ৭ হাজার ৫শ ৮৯ জন আসামীর অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা পুলিশ। গত ১১ আগষ্ট (রোবার) থেকে ২৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) পর্যন্ত এ মামলাগুলোতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন ‘সত্য’ দাখিল করা হয় বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্র এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।
আদালত পুলিশও জানিয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে ধারাবাহিকভাবে মামলাগুলোতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ।
আদালত পুলিশ জানিয়েছে, আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ভাঙচুর, চুরি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা কেন্দ্র করে জেলার ৭টি থানায় ১৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২টি মামলা হয়। এরমধ্যে একটি হত্যা মামলা। এই ১টি হত্যা মামলা ছাড়াও বাকি ৩১টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এ সকল মামলায় ৭ হাজার ৫শ ৮৯ জনকে আসামী ছাড়াও অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামী করা হয়েছিল। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সকল আসামীদের মামলা থেকে প্রত্যহার করার আবেদন জানিয়েছে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, মামলার ঘটনার সঙ্গে গ্রেফতারকৃত আসামীরাসহ এজাহারেভূক্ত আসামীরা জড়িত না। অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা অপরাধ করায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্ত অহেতুক ফেলে না রেখে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পক্ষে মত দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত আসামিদের সন্ধানসহ নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলেও জানায় তদন্ত কর্মকর্তা।
১৭ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২টি মামলার সবগুলো এজাহারেই কোটাবিরোধী অজ্ঞাতনামা আন্দোলনকারী, জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি কর্মীদের আসামি করা হয়েছিল। প্রায় সব মামলার অভিযোগেই বলা হয়েছে, ঘটনার দিন অজ্ঞাতনামা কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী, জামায়াত, শিবির ও বিএনপি নেতাকর্মীরা এক হয়ে লোহার রড, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভিকটিমদের ওপর আক্রমণ করে হত্যা, ভাঙচুর, চুরি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। মামলার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করা হয়।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় সব থেকে বেশি ১৫টি মামলা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। এনমামলার মধ্যে ১টি হত্যা মামলাও দায়ের করা হয়েছে। অধিকাংশ ঘটনায়তেই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মালিকানাধীন শীতল বাস ডিপোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। সে মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে সহ আরও ৯৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয়েছে ৮টি। এ সকল মামলায় আসামী করা হয়েছে মোট ৫ হাজার ২শ ৭০ জনকে। আসামীদের মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় বিএনপির নোতকর্মী। এছাড়াও এ সকল মামলায় ঢালাওভাবে স্থানীয় সাধারণ মানুষসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক সাধারণ ছাত্রকেও আসামী করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অংগ্নিসংযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ভবনে আগুন ও ভাংচুরের ঘটনায় ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাগুলোতে অজ্ঞাত আসামী ছাড়াও ১শ ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরই আছে বন্দর ও সোনারগাঁ থানা। বন্দর থানায় ৩টি ও সোনারগাঁ থানায় ১টি মামলা হয়েছে। বন্দর থানার মামলায় অজ্ঞাত ছাড়াও আরও ১৬শ ১৩ জনকে আসামী করা হয় এবং সোনারগাঁ থানার মামলায় আসামী করা হয়েছে ১১৬ জনকে।
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে তাদের অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করেন আদালত।
মামলা প্রত্যাহার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খাঁন গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাইয়ের ১৭ তারিখ থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার পুলিশ বাহিনী নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩২টি মামলা দায়ের করেছিল। এখন পর্যন্ত ৩০টি মামলাতে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে আদালতে। পর্যায়ক্রমে অন্য মামলাগুলোতেও প্রতিবেদন দেওয়া হবে আশা করি।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসক হাসিনা ও তার প্রশাসন গত সাড়ে ১৫ বছর যাবৎ বিএনপিকে দমনের উদ্দেশ্যে এভাবেই মামলা করে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। যদি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের পতন না হতো তাহলে এ সকল মামলাগুলোতে আমাদের ভুগতে হতো।
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, শুধু ৩২টি মামলাই নয়, ২০০৭ সাল থেকে যতগুলো মামলা হয়েছে সেগুলোও প্রত্যাহার করার জন্য অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার অভিযোগে, মামলাগুলো করাই হয়েছিল বিএনপিকে হয়রানির জন্য। পুলিশ বাহিনীকে স্বৈরশাসক হাসিনা তার দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছিল। আর এই লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে বিরোধী দল দমনই ছিল তাদের একমাত্র কাজ। যার ফলে পুলিশ এখন মানুষের আস্থার সংকটে পড়েছে।
৩২ মামলার এজাহারে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয় সাড়ে ৮ হাজারেরও বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে। উল্লেখযোগ্য আসামীরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খাঁন টিপু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সাবেক বিএনপি নেতা নাসিক ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, মহানগর যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম সজল, সাধারণ সম্পাদক শাহেদ, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজীব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ইকবাল, ইসলামী আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহ, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের দুই ছেলে রিফাত বিন গিয়াস ওরফে রিফাত ও কাউন্সিলর সাদরিল, কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার আমীর শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও একইসঙ্গে ঢালাওভাবে মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে কয়েক হাজার।
প্রসঙ্গত, ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে যত মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক মামলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের (১৫ আগস্ট) মধ্যে তা প্রত্যাহার হবে।
এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..
Dhaka, Bangladesh বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫ ২৮ সফর, ১৪৪৭ | |
ওয়াক্ত | সময় |
সুবহে সাদিক | ভোর ৪:১৭ |
সূর্যোদয় | ভোর ৫:৩৬ |
যোহর | দুপুর ১২:০২ |
আছর | বিকাল ৩:২৯ |
মাগরিব | সন্ধ্যা ৬:২৭ |
এশা | রাত ৭:৪৫ |
আপনার মতামত কমেন্টস করুন