নিজস্ব প্রতিবেদক: ছাত্রলীগের ছায়াতলে থেকেই ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রনি নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যতো তাফালিং করে যাচ্ছেন। কখনো ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এমপিকে চ্যালেঞ্জ করে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হা-পাঁ ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দেয়া, আবার কখনো দলের শীর্ষ নেতা সঙ্গে সরাসরি দন্ধে জড়িয়ে পড়ে সমালোচিত হয়েছেন। এবার পুলিশ প্রশাসনের পোষাক খুলে নেয়ার হুমকী দিয়ে আলোচনায় উঠে আসলেন জেলা ছাত্রদলের বিতর্কীত এই নেতা। রনি এসব বক্তব্য কিংবা নিয়ে দল যেমন বিব্রত। তেমনি ক্ষমতাসীন দলেও এ নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের এমপি-নেতা নিয়ে ছাত্রদল নেতা রণি নানা সময়ে সমালোচনা করলেও পুলিশের পোষাক খুলে নেয়ার বিষয়টি এবার ভিন্ন চোখে দেখছেন বোদ্ধা মহল। বিএনপিতেও এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে রনির এসব বিতর্কীত কর্মকান্ডে খুঁটির জোর নিয়েও। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, রনির মামাতো-ফুপাত দুই ভাই জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে রয়েছে। রনির দু:সাহসের মূল উৎস মূলত ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থাকা দুই ভাই। যে কারণে রনি প্রকাশ্যে ছাত্রলীগ নেতাদের হাত-পাঁ ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দিলেও জেলা কিংবা মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি। ছাত্রলীগের দুই নেতার পাশাপাশি শক্তির অন্যতম উৎস হচ্ছে রনির আপন শ^শুর পুলিশ কর্মকর্তা জহির। বিএনপির একাধিক সূত্রের দাবি, ছাত্রলীগ কিংবা শ^শুর পুলিশ এ শক্তির পাশাপাশি খোদ বিএনপির বেশ কিছু নেতার ইন্ধনে রনি বিতর্কে জড়িয়ে পরছেন। কৌশলে দলের কিছু নেতা রনিকে দিয়ে বিতর্কীত বক্তব্যের মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিয়ে রনির আগামী দিনের রাজনীতির মাঠকে সংকোচিত করে দিচ্ছেন। একদিকে ক্ষমতাসীন দলকে যেমন তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। অন্যদিকে নিজ দলের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্ধন্ধি হিসেবে একাধিক গ্রæপকে রনির মুখোমুখি করে দিচ্ছে। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এমপি শামীম ওসমানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রনি। তিনি বলেছিলেন, ‘শামিম ওসমান সাহেব চ্যালেঞ্জ করেন বিএনপির জন্য নাকি তারা দুই একজন যথেষ্ট একটু হাসি পাচ্ছে ইদানিং ওনার কথা শোনলে আমার মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যে তার মনের ভিতর সব সময় ভয় কাজ করে।’ চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকার মজলুম মিলনায়তনে ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা মূল হোতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি নাম আলোচনায় উঠে আসে। তার অনুসারীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ চৌধুরীর উপর হামলা চালানোর আগে থেকেই লাঠি নিয়ে থাকেন মজলুম মিলনায়তনের সামনে। পরবর্তীতে রিয়াদ চৌধুরীর উপর হামলা করতে না পারলেও তার বিরোধী ছাত্রদল নেতাদের উপর হামলা করেন। এদিন ছাত্রদলের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনার কয়েকদিন পরই মাইরে ছাত্রদলের একটি মিছিল শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত-পাঁ ভেঙ্গে দেয়ার হুমকী দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন ছাত্রদল নেতা রনি। কিন্তু, রনি প্রকাশ্যে হুমকীর পরও রহস্যজনক কারণে জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোন প্রতিবাদ করেন। স্থানীয়রা জানায়, ঝুট দখলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয় রনির ভগ্নিপতি ও ফতুল্লা থানা সৈনিক লীগের সভাপতি মোকলেছ। বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য পাঠানে তারেক রহমানের ঈদ উপহারের একটি অংশ মোকলেছের পরিবারকে দেয়া হয়েছে রনির মাধ্যমে। এ নিয়েও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে চাপা ক্ষোভ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতার মতে, ছাত্রদল নেতা রনির বেফাঁস মন্তব্যের কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য মহা বিপদ অপেক্ষা করছে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে বাঁচাতে হলে রনিকে বেফাঁস মন্তব্য করা থেকে বিরত রাখা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপ চায় বিএনপির নেতাকর্মীরা।